এক অসাধারন নারীর ব্যক্তিত্ব,জানলে আপনিও শ্রদ্ধা করতে বাধ্য হবেন।


বিয়ের আগে ছিলেন সুধা কুলকার্নি। সেই সুধা যখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চাইলেন বাড়ির সবাই বলেছিলেন আমাদের কমিউনিটিতে কিন্তু ছেলে পাওয়া যাবে না। তোমার বিয়ে হবে কি করে? প্রসঙ্গত সুধাদেবীর বাবা ডাক্তার ছিলেন। নামী সার্জেন। কিন্তু তবুও তিনি ইঞ্জিনিয়ারিংই বেছে নেন। 

ক্লাসে 599 টা ছেলে আর একটিই মেয়ে। সে আমলে মেয়েরা তেমন কেউ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ত না যে। সুধা জোর করে ভর্তি হয়েছিলেন। কর্ণাটকের হুবলির ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে। তিনি সে শহরের প্রথম ছাত্রী। কলেজের প্রিন্সিপাল সুধাকে ডেকে বলেছিলেন, তিনটি শর্ত মানতে হবে।

১) রোজ শাড়ি পরে আসতে হবে । 
২ ) কলেজ ক্যান্টিনে ছেলেদের ভিড়, ওদিকে যাওয়া চলবে না। 
৩ ) কোন ছেলের সঙ্গে ক্লাসে কথা বলা যাবে না। 

তিনি অক্ষরে অক্ষরে তিনটিই মেনে চলতেন। কিন্তু কলেজের দ্বিতীয় বর্ষে তিন নম্বর শর্তটি আর মানা সম্ভব হয়নি। কারণ ছেলেরা তাঁর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে ফিরল এবং এসে কথা বলল। ওই 600 স্টুডেন্টের মধ্যে ফার্স্ট হয়েছিলেন যে সুধা। 

তিনি তারপরে আর কোথাওই দ্বিতীয় হননি। BE তে ফার্স্ট। রেকর্ড নাম্বার। গোল্ড মেডালিস্ট। স্বয়ং  মুখ্যমন্ত্রীর হাত থেকে সেই মেডেল নেন। আরো পড়তে ইচ্ছে হল তাঁর। এবারে ME। সেখানেও গোল্ড মেডেল। সেই মেডেল এবারে দিল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ার্সরা। 

কিন্তু পাশ করে বেরোনোর পর অদ্ভুত ব্যাপার। তাঁর জন্য কোথাও কোন চাকরির দরজা খুলল না। সমস্ত কোম্পানিই মেল ডমিনেটিং। মহিলা ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য দরজা বন্ধ। কি আশ্চর্য! তাই না? খুব বেশিদিন আগেও না। 1970 - 72 এর ঘটনা । 

এইসময় একটা বিজ্ঞাপন চোখে পড়ে সুধা কুলকার্নির। ইঞ্জিনিয়ার চাই। যোগ্যতা অমুক তমুক। কিন্তু নিচে বড় হরফে লেখা মহিলাদের আবেদন করার প্রয়োজন নেই। টেলকো কোম্পানির বিজ্ঞাপন। 

তিনি খুব রেগে টাটা কোম্পানিতে স্বয়ং জে আর ডি  টাটাকে একটা  চিঠি লিখলেন। এরকম কেন হবে? যোগ্যতাই কি একমাত্র মাপকাঠি হতে পারে না? টাটা কর্তারা নড়েচড়ে বসলেন। ডাক পেলেন স্পেশাল  ইন্টারভিউতে। এবং বাকিটা ইতিহাস। তিনিই টাটার  টেলকো কোম্পানির প্রথম মহিলা ইঞ্জিনিয়ার। ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দিলেন। কাউকে না কাউকে তো অসম লড়াই চালাতে হয়। তার সুফল ভোগ করে পরবর্তী প্রজন্ম। 

এরপর ওই টেলকোতেই নারায়ণ মূর্তির সঙ্গে আলাপ। তারপর বিয়ে। সুধা 400 টাকা আর নারায়ণ 400 টাকা দিয়েছিলেন নিজেদের বাড়িতে। সেই টাকাতেই সাদামাটা আড়ম্বরহীন বিবাহ হয়েছিল। তাঁদের এক ছেলে ও এক মেয়ে। দুজনেই এখন প্রতিষ্ঠিত । 

ইনফোসিস খোলার কথা মাথায় আসে নারায়ণের।
নিশ্চিত জীবন ছেড়ে এক অনিশ্চিত সম্ভাবনা। সুধা তখনও চাকরি করতেন এবং নিজের সমস্ত জমা পুঁজি দিয়ে দিয়েছিলেন। তারপরেও খানিক দিন সুধার চাকরির আয়ে চারজনের সংসার চলত। এই হল গোড়ার কথা। 

তারপর দেশের নানা প্রান্তে 70000 লাইব্রেরি, 10000 টয়লেট, 2600 গৃহহীনকে গৃহ, দেশের খরা, বন্যা সবেতে নীরবে কাজ করে চলে ইনফোসিস। 
তিনি একদিকে শিক্ষিকা, লেখিকা, আবার অত বড় কোম্পানির চেয়ারপার্সন। বহু সম্মান, বহু পুরস্কার পেয়েছেন। 

টাটা কোম্পানি ছাড়ার সময়ে JRD TATA তাঁকে অমূল্য উপদেশ দিয়েছিলেন, "সবসময় একটা কথা মনে রাখবে, তোমার সমস্ত টাকা পয়সার তুমি অছিমাত্র (ট্রাস্টি)। টাকার সবসময় হাতবদল হয়। হাতে রেখে লাভ নেই। টাকা বড় ক্ষণস্থায়ী। যদি সাফল্য আসে সমাজকে কিছু ফিরিয়ে দেবে। সেটাই কিন্তু চিরস্থায়ী।

তিনি আজো ভোলেননি। এবং সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি বলেন - "বিগত একুশ বছর আমি কোনো শাড়ি কিনিনি। যা পরি সবই পাওয়া, আমি শুধু বই কিনি।" 

একবার এমনও হয়েছিল তিনি প্লেনের বিজনেস ক্লাস লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। এক ভদ্রলোক তাঁর সাজপোশাক দেখে তাঁকে  "Cattle Class" বলেছিলেন! তিনি জানতেন না সুধা মূর্তি ভারতের Richest Person দের মধ্যে অন্যতম। পদ্মশ্রী  সুধা মূর্তি বলেন - "Simplicity is the best jewellery I wear." 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন