চিনেন এই ব প্রবাদপ্রতিম বাঙালি কে, জানুন একটি মজাদার ঘটনা ইনার জীবন নিয়ে ।Know this proverbial Bengali, know an interesting fact about his life.
কে ছিলেন সেই বাঙালি ভদ্রলোক ?
সেই বাঙালি ভদ্রলোকটি ছিলেন বিশিষ্ট গণিতজ্ঞ রাজচন্দ্র বসু | সুইস গণিতজ্ঞ অয়লার ১৭৮২ সালে একটি গাণিতিক অনুমান করেন, যা পরিচিত কনজেকচার নামে | প্রায় ১৮০ বছরের কাছাকাছি অয়লারের এই মতবাদ প্রতিষ্ঠিত ছিল | ১৯৫৯ সালে বাঙালি গবেষক রাজচন্দ্র বসু, সহ গবেষক ই টি পার্কার এবং শঙ্কর শ্রীখন্দ অয়লারের এই তত্ত্বকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছিলেন | ফলশ্রুতিতে বসু সহ তিন বিজ্ঞানীর নামই হয়ে গেল অয়লারস স্পয়লার্স। গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটির সম্মেলনে | বিজ্ঞানমহলে শোরগোল পড়ে যায় এই ঘটনায় | নিউ ইয়র্ক টাইমসের সায়েন্স এডিটর নিজেই গিয়েছিলেন রাজচন্দ্র বসুর ইন্টারভিউ নিতে | পরের দিন সেই সাক্ষাৎকারটি ছাপা হয়েছিল পত্রিকার প্রথম পাতায় | এই ফলাফল স্ট্যাটিস্টিক্সের নতুন দিগন্ত খুলে দেয় | বোস-মেসনার অ্যালজেব্রার আবিষ্কারক ছিলেন তিনি | পরিকল্পনা তত্ত্বেও বিরাট গবেষণা রয়েছে তাঁর | জ্যামিতিক উপপাদ্যতে প্রচলিত BCH কোড রাজচন্দ্র বসুর নামের আদ্যক্ষর দিয়ে |
রাজচন্দ্র বসুর জন্ম ১৯০১ সালের ১৯ শে জুন মধ্যপ্রদেশের হোসাঙ্গাবাদে | তাঁর পিতা ডাক্তার প্রতাপচন্দ্র বসু ছিলেন চন্দননগরের খলসানি অঞ্চলের বিখ্যাত বসু পরিবারের সন্তান। ঊনবিংশ শতকের শেষ এবং বিংশ শতকের শুরুর দিকে বাংলার বহু মানুষ পশ্চিম ও মধ্য ভারতে গিয়ে বসবাস শুরু করে |প্রতাপচন্দ্র বসু পাড়ি দেন হোসাঙ্গাবাদে | সেখানেই তিনি ঊষাঙ্গিনী দেবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন |
রাজচন্দ্র পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে বড় ছিলেন। তিনি হরিয়ানার রোহতকের একটি সরকারি বিদ্যালয় থেকে শিক্ষালাভ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি দিল্লির হিন্দু কলেজে ভর্তি হন। সেই সময়ে তাঁর মা ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। মায়ের মৃত্যুর পরেও রাজচন্দ্র ১৯১৯ খ্রিস্টাব্দে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় প্রথম হন । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দের জানুয়ারিতে রাজচন্দ্রের পিতা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন | পরিবারের পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে রাজচন্দ্রের উপর | এই কঠিন পরিস্থিতিতেও তিনি ১৯২২ খ্রিস্টাব্দে গণিতে বি.এ. অনার্স এবং ব্যবহারিক গণিতে ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি কলকাতায় আসেন এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম স্থান অর্জন করে বিশুদ্ধ গণিতে দ্বিতীয় এম.এ. ডিগ্রী লাভ করেন | ১৯২৮ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক শ্যামাদাস মুখার্জির অধীনে রিসার্চ এসোসিয়েটস হয়ে যোগ দেন রাজচন্দ্র । অর্থাভাবে মাঝপথে বন্ধ হয়ে যায় তার গবেষণা, শুরু করেন জ্যামিতির ওপর বই লেখা। শিক্ষা মহলে খ্যাতি পায় তার লেখা বই |
১৯৩২ সালে রাজচন্দ্র বসু ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিকাল ইনস্টিটিউটে অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন | ১৯৪০ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান করেন এবং ১৯৪৫ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রধান হন | দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি পাড়ি দেন মার্কিন মুলুকে | ক্যাপেল হিলের নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিসংখ্যান বিভাগের প্রফেসর হিসেবে যোগ দেন রাজচন্দ্র বসু | এরপর তিনি ক্রমেই এই ইনস্টিটিউটের প্রধান গণিতজ্ঞ হয়ে উঠেন। তিনি ৭০ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করেন।প্রশান্তচন্দ্র মহলানবীশ এবং সমরেন্দ্রনাথ রায়ের সঙ্গে মিলে রাজ চন্দ্র বসু "multivariate বিশ্লেষণে" কাজ করেছেন। ১৯৩৮-৩৯ সালে রোনাল্ড ফিশার ভারত সফর করেন এবং "পরীক্ষা নকশা" সম্পর্কে রাজচন্দ্র বসুর সঙ্গে কাজ করেন | ১৯৮৭ সালের ৩১ অক্টোবর প্রয়াত হন এই কৃতি বঙ্গসন্তান |
তথ্য : উইকিপিডিয়া