বহুমুখী প্রতিভা সম্পন্ন এই মাটির মানুষ পেলেন এই সম্মান,খুশি উত্তরবঙ্গের সংস্কৃতি প্রেমী মানুষ।The people of this soil with multifaceted talents got this honor, happy people who love the culture of North Bengal.


"শিক্ষাজ্যোতি" সম্মানে ভূষিত হচ্ছেন  কবি, সাহিত্যিক, লেখক তথা অবসরপ্রাপ্ত বিশিষ্ট শিক্ষক শচীমোহন বর্মণ।

প্রথাগত ব্যবস্থায় মুক্তচিন্তা সাহিত্যের স্কুল প্রতিষ্ঠা ও কবিতা লেখা শেখানোর পদ্ধতির প্রবর্তক শচীমোহন বর্মণের পরিচিতি জেনে নিন।

শচীমোহন বর্মণ ( জন্ম তারিখ  17/01/1961)। জন্মস্থান -খারিজা বাত্রিগাছ, দিনহাটা, কোচবিহার। পিতা স্বর্গীয় হরিদয়াল বর্মন, মাতা স্বর্গীয় সরলা বর্মন।

শিক্ষাজীবন -বৈচিত্র্যময় শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকেই অনাহারে, অর্ধাহারে থেকে অনেক দু:খ কষ্টের মধ্যে দিয়ে এম.এ.বিএড. সম্পূর্ণ করেন। শিক্ষার প্রতি আগ্রহ ছিল অসীম। বারো বছর বয়সে নাচ শেখেন গিদাল নরেন রায়ের নিকট। পনেরো বছর বয়সে স্বরাজ বাজিয়ে বাউল কীর্তন শেখেন গুরু মতিলাল গোঁসাইয়ের নিকট। অন্যান্য কীর্তনের গুরু সন্তোষ খ্যাপা। ভাওয়াইয়া ও দোতরার গুরু অভয় রায়। তবলা, ঢোল ও বাঁশির গুরু ভবানী রায়। আধ্যাত্মিক ও সন্ন্যাস(1979-1981) জীবনের গুরু শ্রী শ্রী আনন্দমূর্তিজী। তাছাড়া নিজের চেষ্টায় শিখেছেন খোল, হারমোনিয়াম সহ অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র।
শিক্ষা জীবনের সহযোগী-মাতা সরলা বর্মন ধানের শীষ কুড়িয়ে, তামাক কুড়িয়ে লেখাপড়ার খরচা জুগিয়েছেন। শচীমোহন বর্মন টিউশন করে পড়ার খরচ যোগাড়ে মাকে সাহায্য করতেন।  নিজে উচ্চমাধ্যমিক কলা বিভাগে পড়লেও মাধ্যমিকের অংক, ইংরেজি সবই পড়াতেন। উচ্চমাধ্যমিকেরও কলা বিভাগের সব বিষয়ে  তার পাণ্ডিত্য ছিল এবং এখনও আছে। শিক্ষা জীবনে অন্য সহযোগীরা হলেন সহধর্মিনী নন্দবালা বর্মন, বন্ধু আফজাল হোসেন, সুবল চন্দ্র রায় এবং পবেন্দ্রনাথ বর্মন, ছাত্রী লীলা রায়, সন্তানসম হরিশ চন্দ্র রায় এবং আরো অনেকে।
শিক্ষকতা -- চাংড়াবান্ধা হাই স্কুল ( 23/02/1999- 31/01/2021)।
বর্তমান অবস্থান -বাড়ির নাম  মুক্তচিন্তা ভবন, মুক্তচিন্তা কেন্দ্রীয় কার্যালয়, উত্তর ভোটবাড়ি, গ্রাম 147 ভোটবাড়ি, ডাক ভোটবাড়ি, জেলা কোচবিহার, পিন 735301। উল্লেখ্য যে বর্তমান বাসস্থানের স্থাবর অস্থাবর সকল সম্পত্তি  তিনি মুক্তচিন্তা সংগঠনক উৎসর্গ করেছেন।

প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনা --
সংস্থা সমূহ : শচীমোহন বর্মন সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা, গবেষণা ও সমাজ কল্যাণ
নিয়ে নতুন ভাবনার কথা বলেছেন। এই ভাবনা গুলোকে বাস্তবায়ন করার উদ্দেশ্যে আরো অনেকের সাহায্য নিয়ে নিম্নলিখিত সংস্থাগুলোর প্রতিষ্ঠা করেছেন। সকলের নাম উল্লেখ করার পরিসর এখানে না থাকলেও অন্তত মাওলানা শহীদুল ইসলামের নাম উল্লেখ করতেই হয়। কারণ 
সকল মানুষ কবি বা অনুশীলনের মাধ্যমেও কবি হওয়া সম্ভব এসব ধারণা ও তার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং  পুষ্টিকরণে মাওলানাজীর প্রধান ভুমিকা ছিল।
প্রথাগত শিক্ষা পদ্ধতি ভিত্তিক কবিতা, গল্প লেখা শেখানোর সাহিত্যের স্কুল  তথা  মুক্তচিন্তা সাহিত্য অনুশীলন কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা করা হয় । 2004 এর 19 জুন থেকে এই স্কুলে নিয়মিত পঠনপাঠন শুরু হয়। এরপর প্রতিষ্ঠিত হয়  মুক্তচিন্তা লোকসংস্কৃতি চর্চা গবেষণা কেন্দ্র, মুক্তচিন্তা লোকসংস্কৃতি সংগ্রহশালা, মুক্তচিন্তা সাহিত্য অনুশীলন গ্রন্থাগার, মুক্তচিন্তা ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশন, ফিলানথ্রোপিষ্ট রিপোর্টার্স ইন সোস্যাল মিডিয়া, মুক্তচিন্তা তরাই পুতুল নাট্য সংস্থা, মুক্তচিন্তা মহিলা কবি সভা, পাক্ষিক আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র, হেলাপাকড়ি মুক্তচিন্তা লোকসঙ্গীত একাডেমি, উত্তরবঙ্গ শ্যামাপদ বর্মন লিটল ম্যাগ সংগ্রহশালা, মুক্তচিন্তা শিশু বিদ্যানিকেতন (নার্সারী স্কুল ), মুক্তচিন্তা রেকর্ডিং স্টুডিও সহ বিভিন্ন শাখা সংগঠন।

পত্রিকা সমূহ : মুক্তচিন্তা, দিশারী ( সম্পাদক শচীমোহন বর্মন), মুক্তলিপি ( সম্পাদিকা নন্দবালা বর্মন)। যুক্ত রয়েছেন মুক্তকথা, মুক্তাঞ্জলি, অপরাজিতা অর্পণ, মুক্তপবন, ময়নামতি, সুনামি সহ আরো অনেক পত্রিকায়।

শচীমোহন বর্মনের গ্রন্থ-- 1) লাল নীল সাদা, প্রকাশক সাহিত্য বিভাগ, যুবক সংঘ, মদনাকুড়া, দিনহাটা(1999), 2) জয়প্রকাশ নারায়ণ : একটি মূল্যায়ন, প্রকাশক সাহিত্য বিভাগ, যুবক সংঘ,মদনাকুড়া, দিনহাটা(2000), 3) মুক্তচিন্তা কি এবং কেন? প্রকাশক নন্দবালা বর্মন(2004), 4) জ্যোৎস্নার তারা ( কবিতা সংকলন), প্রকাশক নন্দবালা বর্মন(2004), 5) অগোছালো পৃথিবী (রাজবংশি গল্প সংকলন, প্রকাশক নন্দবালা বর্মন(2004), 6) সাহিত্য অনুশীলন নির্দেশিকা প্রথম খণ্ড এবং দ্বিতীয় খণ্ড ( সম্পাদিত) প্রকাশক নন্দবালা বর্মন(2005,2010), 7) উপল পথের উত্তরাধিকার ( উপন্যাস ), প্রকাশক মাওলানা সহিদুল ইসলাম (2007), 8) সাহিত্যের গান, প্রকাশক লক্ষ্মী নন্দী(2010), 9)  মুক্তচিন্তা শিশু বিদ্যানিকেতন নার্সারী বিদ্যালয়, প্রকাশক -- মুক্তচিন্তা সাহিত্য অনুশীলন  কেন্দ্র (2011), 10) সাহিত্য অনুশীলন নির্দেশিকা স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা, প্রকাশক - নন্দবালা বর্মন(2011), 11) উত্তরের লোকশিল্পী পরিচয়, প্রকাশক নন্দবালা বর্মন, 12) লোকসঙ্গীত স্বরলিপি ( ভাওয়াইয়া খণ্ড ) প্রকাশক নন্দবালা বর্মন, 13) লোকসঙ্গীত স্বরলিপি,(পালাগান খণ্ড ) প্রকাশক গৌতম সরকার, সম্পাদক মুক্তচিন্তা ওয়েলফেয়ার অর্গাইজেশন), 14) ভাওয়াইয়া গান প্রসঙ্গ, প্রকাশক ঐ, 15) আমার নাট্য সঞ্চয়ন, প্রকাশক ঐ, 16) আমার বাউল গান, প্রকাশক ঐ, 17) শৌলমারীর কুল(রাজবংশি গল্প সংকলন), প্রকাশক ঐ, 18) উদাসীয়া(রাজবংশি কবিতা  সংকলন), 19) মুক্তকণা (রাজবংশি কবিতা সংকলন), 20) কবিতা লেখা বিষয়ক কর্মশালার প্রাথমিক বিষয় সমূহ, প্রকাশক মুক্তচিন্তা সাহিত্য অনুশীলন কেন্দ্র। 21) লোকসঙ্গীত সাধনার অ আ ক খ ( প্রকাশক মুক্তচিন্তা লোকসঙ্গীত একাডেমি )।

 প্রাপ্ত সম্মান / পুরস্কার -- 1) ভারতীয় মানসুরিয়া আঞ্জুমান 1411, 2) ভোটবাড়ি স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও ফেসিলেটর, 3) সুনামি পত্রিকা গোষ্ঠী, 4) মুক্তপবন সাহিত্য গোষ্ঠী, 5) লোকসঙ্গীত একাডেমি সর্বগুরু সম্মান, 6) ডহর পত্রিকা গোষ্ঠী ও মুক্তচিন্তা সাহিত্য অনুশীলন কেন্দ্র, হেলাপাকড়ি, 7) উত্তরবঙ্গ কবিতা উৎসব সাহিত্য সম্মান, ইসলামপুর, 8) মেখলীগঞ্জ ব্লক  বিবেক মেলা 2012, 9) ভৌটবাড়ি বিদ্যাসাগর স্মৃতি সংঘ ও রাসমেলা কমিটি, 10) পঞ্চানন বর্মা ট্রাস্ট কমিটি, মাথাভাঙ্গা, 11) বিধাননগর ওয়েলফেয়ার সোসাইটি, 12) সাহিত্য অঙ্গন সম্মান শিলিগুড়ি, 13) ঊহিনী সাহিত্য পত্রিকা সম্মান, 14) গোপেশ দত্ত স্মৃতি উৎসব কমিটি, কোচবিহার, 15) মেখলীগঞ্জ জার্নালিষ্ট ক্লাব, 16) সৃজন একটি সামাজিক সংগঠন আজীবন কৃতি  সম্মান, 17) 25তম রাজ্য ভাওয়াইয়া কমিটি 2014 কর্তৃক লোকসংস্কৃতি সংগ্রাহক সম্মান, 18) লোকসঙ্গীত একাডেমি কর্তৃক সর্বগুরু সম্মান, 19) সিনিউজ কর্তৃক জীবন কৃতি সম্মান, 20) গচিবুনা উৎসব জামালদহ কর্তৃক সম্মান, 21) দি স্টেট কনফারেন্স অফ সোস্যাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক সম্মাননা, 22) লক্ষ্মী নন্দী স্মৃতি পুরস্কার 

অভিনব সৃষ্টি - কবিতা লেখার পদ্ধতি, সাহিত্য সঙ্গীত ও সাহিত্য নৃত্য প্রভৃতি। নার্সারি বিদ্যালয়ে   তিনি লোকসংস্কৃতির পাঠ দিয়ে ছোট্ট থেকেই শিশু মনে লোকসংস্কৃতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে চেয়েছেন। বইয়ে দেওয়া ছড়া নয়। গুরুত্ব দিয়েছেন শিক্ষকের নিজস্ব তাৎক্ষণিক তৈরি ছড়ার উপর। সমাজ কল্যাণে পরিসেবার নতুন অর্থ করেছেন। বেতন নিয়ে সমাজ সেবা হয় না। বেতনের অংশ দান করা বা পারিশ্রমিক ছাড়া সেবা করার মধ্যেই প্রকৃত ত্যাগের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন।

 শচীমোহন বর্মণ একাধারে সাহিত্যিক, লোকসংস্কৃতির অবিদ্যায়তনিক গবেষক,লোকশিল্পী, শিক্ষাবিদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন