আরজিকর ঘটনার পরবর্তী সময়ে দলের সাথে দূরত্ব বাড়ছে অভিষেক ব্যানার্জির।
আর জি কর কাণ্ডের পরবর্তী সময়ে তৃণমূলের সাথে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক ব্যানার্জির দূরত্ব আবার তৈরি হয়েছে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। কারণ আরজিকর ঘটনার পরবর্তী সময়ে রাজ্য ছেড়ে উত্তাল হয়েছে দেশ, দেশের গণ্ডি ছেড়ে বিদেশেও আন্দোলন হতে দেখা গেছে বিচারের দাবিতে। অভিষেকের নেতৃত্বে লোকসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পায় দল,পশ্চিমবঙ্গে ২৯ আসন পেয়ে প্রধান বিরোধী দল বিজেপিকে বোল্ড আউট করে দিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল। এরপর চারটি বিধানসভার উপনির্বাচনেও বিশাল জয় পায় তৃণমূল। কিন্তু উক্ত দুই ভোটের বিপুল জনপ্রিয়তা আরজিকর ঘটনার পরবর্তী সময়ে দল থেকে শুরু করে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি এবং মমতা ব্যানার্জির জনপ্রিয়তা এই মুহূর্তে তলানিতে এসে ঠেকেছে বলে অনেকে মনে করছেন।বলা যায় প্রবল গরমের মধ্যেই তৃণমূলের বসন্ত শুরু হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আরজিকরের ঘটনা সবকিছু যেন রাতারাতি ওলটপালট করে দিয়েছে। ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে যেভাবে কয়েকশো দুষ্কৃতী আরজিকর হাসপাতালের ভিতরে ঢুকে তাণ্ডব চালিয়েছে তার নিন্দার কোনও ভাষা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। এই আবহের মধ্যে হঠাৎই তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় দলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়িয়েছেন বলে চর্চা শুরু হয়েছে।
কী কারণে এমন জল্পনা শুরু হয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে? ঘটনা হলো ১৪ আগস্ট মধ্যরাতে আরজিকর হাসপাতালে দুষ্কৃতীদের তাণ্ডবের পর অভিষেক এক্স হ্যান্ডলে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের উদ্দেশে লিখেছিলেন, সেই ঘটনায় যুক্ত থাকা সমস্ত অভিযুক্তকে যেন গ্রেফতার করা হয়। কাউকে যেন ছাড়া না হয়। সেদিন সুনির্দিষ্ট ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের নাম কিন্তু করেননি তিনি। অথচ এরপরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই হামলার দায় চাপিয়ে দেন রাম-বামের উপর। অর্থাৎ সেই ঘটনায় বিজেপি এবং সিপিএমের দুষ্কৃতীরা যুক্ত ছিল বলে মমতার অভিযোগ। স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।
এরপরই দেখা যায় হঠাৎই যেন নীরব হয়ে গিয়েছেন অভিষেক। তৃণমূলের একটি সূত্রে এ কথাও জানা যায় যে, এতদিন ধরে সংবাদমাধ্যমে কারা বিবৃতি দেবেন, বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দলের পক্ষ থেকে কারা যাবেন, তা ঠিক করে দিত ক্যামাক স্ট্রিটে থাকা অভিষেকের অফিস। কিন্তু আরজিকর হাসপাতালে হামলার পরই ক্যামাক স্ট্রিট সেই দায়িত্ব থেকে সরে আসে বলে খবর। যদিও প্রকাশ্যে কেউই এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। কিন্তু গোটা বিষয়টি নিয়ে নানা জল্পনা শুরু হয়ে যায়।
এর আগেও রাজ্য প্রশাসনের একাংশের কাজ নিয়ে অভিষেক প্রশ্ন তুলেছিলেন বলে শোনা যায়। তখন বেশ কিছুদিনের জন্য তিনি রাজ্য রাজনীতি থেকে ‘বিরতি’ নিয়েছিলেন। এই আবহের মধ্যে নারকীয় নারী নির্যাতনের ঘটনার পর থেকেই অভিষেক অদ্ভুত ভাবে চুপ করে গিয়েছেন।
সূত্রের খবর, অভিষেক অনুগামী একাধিক তৃণমূল নেতা ঘনিষ্ঠ মহলে বিষয়টি নিয়ে এই ব্যাখ্যাই করছেন যে, আরজিকর পরিস্থিতি সামলাতে যেভাবে ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য প্রশাসন, তা একেবারেই ভাল চোখে দেখছেন না অভিষেক। তাই তিনি চুপ করে গিয়েছেন বলে সেই অংশ মনে করছেন। সবমিলিয়ে তৃণমূল যে বর্তমানে বেশ ছন্দহীন হয়ে পড়েছে তা বলাই যায়। বিপুল সাফল্যের পরেও তৃণমূল বেশ টেনশনে রয়েছে বলে বোঝা যাচ্ছে। এই অবস্থা তৃণমূল কাটিয়ে উঠতে পারে কিনা এখন সেটাই দেখার।