ভারতের প্রথম মহিলা প্যারাট্রুপার কে চিনেন,জানুন এক ক্লিকে!
দিনটা ছিল 17 জুলাই 1959; একটি ডাকোটা বিমান উত্তর ভারতের মাঝ আকাশে উড়ছিল। বিমানের দরজা খোলা ছিল, এবং সেখানে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকজন প্যারাট্রুপার, যাঁদের মধ্যে প্রথম তিনজন ছিলেন প্রশিক্ষক এবং তাঁদের পিছনে ছিলেন শিক্ষানবিশেরা, যাঁরা প্রথমবার বিমান থেকে লাফ দিতে প্রস্তুত ছিলেন। অবশেষে সঙ্কেত পাওয়া মাত্র একে একে লাফিয়ে পড়েন তাঁরা এবং সফলভাবে প্যারাসুট খুলে মাটিতে অবতরণ করেন।
কিন্তু এই দিনটা একটি বিশেষ কারণে ইতিহাসের পাতায় উজ্জ্বল হয়ে আছে। আর সেই কারণ হলো, এই শিক্ষানবিশদের দলে ছিলেন একজন সাহসী নারী, নাম তাঁর গীতা চন্দ্র। ভারতের প্রথম মহিলা প্যারাট্রুপার হয়ে তিনি সেদিন ইতিহাস রচনা করেন।
কিন্তু এই উচ্চতায় পৌঁছানো গীতার পক্ষে মোটেও সহজ ছিল না| পদে পদে এসেছিল বাধা| আজ বলবো সেই কাহিনী।
এক বাঙালি পরিবারে জন্ম হয়েছিল গীতার| শৈশব কেটেছে রংপুরে। তাঁর বাবা হরেন্দ্র চন্দ্র কারমাইকেল কলেজের প্রভাষক ছিলেন। গীতা পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন এবং প্রখর ক্রীড়াবিদ ছিলেন। তিনি মেডিসিন অধ্যয়ন করেন এবং পড়াশুনা শেষ করার পর, 1957 সালের নভেম্বরে তিনি ভারতীয় বিমান বাহিনীতে মেডিকেল অফিসার হিসাবে যোগদান করেন।
এরপর তিনি পশ্চিমবঙ্গে পোস্টেড হন। 1959 সালে, ভারতীয় বিমান বাহিনী প্যারা-ট্রুপিং-এ প্রশিক্ষণ নেওয়ার জন্য বিমান বাহিনীর সমস্ত চিকিৎসা পেশাদারদের জন্য একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল। সেই অনুযায়ী সব স্টেশনে সার্কুলার পাঠানো হয়েছিল। যদিও কোনো পুরুষ চিকিৎসক স্বেচ্ছায় প্রশিক্ষণের প্রস্তাব গ্রহণ করেননি এবং তাদের আপত্তি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন।
কিন্তু গীতা ছিলেন কঠিন ধাতুতে তৈরি এবং তিনি এই প্রস্তাব একেবারে লুফে নিয়েছিলেন। তাঁর সহকর্মীরা তাঁকে সার্কুলারটিতে "প্রযোজ্য নয়" লিখতে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু গীতা এই পরামর্শে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। তিনি অবিলম্বে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণের জন্য আবেদন করেছিলেন।
তাঁর সিদ্ধান্তটি সকলকে হতবাক করেছিল, কারণ তারা বিশ্বাস করতো প্যারা-ট্রুপিং একটি বিপজ্জনক কাজ এবং এটি শুধুমাত্র পুরুষ সৈন্যদের জন্য। সুতরাং, গীতার বিরোধিতাকারীরা তাঁর দ্রুত পশ্চাদপসরণ করার জন্য ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেছিল।
কিন্তু তাদের সেই আশায় জল ঢালতে বদ্ধপরিকর ছিলেন গীতা| আর এই বিষয়ে তাঁকে সমর্থন করেছিলেন এয়ার মার্শাল সুব্রত মুখার্জী, যিনি তখন ভারতীয় বিমানবাহিনীর প্রথম ভারতীয় কমান্ডার-ইন-চিফ হিসেবে কাজ করছিলেন।
গীতা কোর্সের জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং 1959 সালের মে মাসে প্যারা-ট্রুপার স্কুলে যোগদান করেন। উত্তর ভারতে তাঁর প্রশিক্ষণ শুরু হয় এবং তিনিই একমাত্র শিক্ষানবিশ ছিলেন, যিনি উত্তর সমভূমির প্রচণ্ড উত্তাপের মধ্যে স্কুলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।
দেড় মাস ধরে, তাঁকে পাঁচ মাইল স্প্রিন্ট করতে হয়েছিল এবং তারপরে শারীরিক প্রশিক্ষণ এবং ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম করতে হয়েছিল। এর পরে, তাঁর প্যারা-ট্রুপিং গ্রাউন্ড প্রশিক্ষণ শুরু হয়। তিনি প্রশিক্ষণ শেষ করার পরে, তাঁর পরীক্ষা দেওয়ার সময় আসে।
এরপর 17 জুলাই , 1959 সালে গীতা চন্দ্র তাঁর দক্ষতা দেখিয়েছিলেন এবং একটি উড়ন্ত ডাকোটা বিমান থেকে লাফ দিয়েছিলেন।
দেখতে আসা দর্শকরা হয়েছিলেন উচ্ছ্বসিত, যা গীতার আত্মবিশ্বাসকেও বহুগুণে বৃদ্ধি করেছিল। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে গীতা সাতবার প্যারা-ট্রুপড ছিলেন এবং একবার রাতেও। তিনি সফলভাবে কোর্সটি সম্পন্ন করার পর, এয়ার মার্শাল মুখার্জী নিজে হাতে তাঁকে প্যারা-ট্রুপারের ব্যাজ দিয়ে সম্মানিত করেছিলেন।
ভারতের প্রথম মহিলা প্যারাট্রুপার, এই সাহসী বঙ্গনারীকে সেল্যুট।