অলিম্পিকে খেলা প্রথম ভারতীয় মহিলা কে ছিলেন জানেন কি?Do you know who was the first Indian woman to play in the Olympics?


প্রথম ভারতীয় নারী হিসেবে অলিম্পিকে দৌড়ে ইতিহাসের পাতায় চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছিলেন ১৭বছরের এই বাঙালি কন্যা।  বিশ্বের সেরা-সেরা মহিলা অ্যাথলিটদের সঙ্গে ১৯৫২ সালের হেলসেঙ্কি অলিম্পিকের ১০০মিটার দৌড়ের প্রথম হিটে ভারতের হয়ে দৌড়েছিলেন নীলিমা ঘোষ,রচিত হয় অনন্যএক রেকর্ড ।
অলিম্পিকের আগে কলকাতায় হার্ডলস প্রাকটিস করার অসুবিধা ছিল সেজন্য প্রতিদিন পৌঁছে যেতেন কলকাতা থেকে একটু দূরে। পায়ে রানিং শু,পরনে ছোট প্যান্ট,গায়ে ডোরা কাটা জামা,সমস্ত দেহে যেন শক্তির আভা৷ কোঁকড়া চুলের এই মেয়েটিকে দেখলে মনে হত কোনও গ্রীক ভাস্করের হাতে গড়া পাথরের প্রতিমূর্তি৷
অ্যাথলিট ইস্থার লীলা কে পিছনে ফেলে নীলিমার উত্থান৷ ১৯৪৮থেকে ১৯৫৮, মেয়েদের অ্যাথলেটিক্সে নীলিমা বাংলার সুনাম বৃদ্ধি করেছেন৷ রাশি-রাশি পুরস্কার জিতেছেন৷ জাতীয়-রাজ্য রেকর্ড ভাঙাগড়া করেছেন৷ ছোটবেলায় অ্যাথলেটিক্সে হাতেখড়ি হৃষীকেশ পার্কের ব্যায়াম সঙ্ঘে৷ এরপর পার্ক পেরিয়ে বড় মাঠ৷ ১৯৪৮থেকে সুনাম আহরণ৷ 

দেশ সদ্য স্বাধীন হয়েছে,ভারতীয় ক্রীড়া মানচিত্রে তখন শুধু ফুটবল, হকি,আর ক্রিকেট৷ পুরুষদের জন্য খেলার পরিসর থাকলেও মহিলাদের খেলাধুলায় বড় প্রাচীর সামাজিক সংস্কার আর ছুৎমার্গ৷ অনেক পরিবারের গৃহস্বামীরা চাইতেন না বাড়ির মেয়েরা বাইরে বের হয়ে খেলাধুলা করুক৷ আক্ষরিক অর্থে মেয়েদের জন্য ক্রীড়া পরিকাঠামো বলে তেমন কিছু ছিল না,যা ছিল সবটা ব্যক্তিগত উদ্যোগ৷ সেই পরিকাঠামোয় দৌড় পটিয়সী হিসেবে নীলিমার জুড়ি ছিল না বললেই চলে৷ 
 অ্যাথলেটিক্সের ক্ষেত্রে সে যেন এক অনবদ্য সৌন্দর্যের ছবি,অফুরন্ত প্রাণশক্তির অধিকারিণী ছিলেন৷
 ১৯৫১সালে দিল্লীতে প্রথম এশিয়ান গেমসে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন৷  ১৯৫২সালে মাদ্রাজে জাতীয় অ্যাথলেটিক্সে ৮০মিটার হার্ডলসে প্রথম স্থান অধিকার করে হেলসেঙ্কি অলিম্পিকে ভারতের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেলেন ।হার্ডলসে নীলিমার সময় ছিল ১৩.১সেকেণ্ড৷ হেলসেঙ্কিতে একই ইভেন্টে আরও ভাল সময় হয়েছিল ১২.৯সেকেণ্ড৷ তবু দ্বিতীয় হিটে স্থান হয়েছিল পঞ্চম৷ ১০০মিটার দৌড়েও প্রথম হিটে পঞ্চম,সময় ১৩.৬সেকেণ্ড৷ অবশ্য গর্ববোধ করতে হয় কারণ অলিম্পিকে ৮০মিটার হার্ডলসে নীলিমার ১২.৯সেকেণ্ড ভারতীয় হিসেবে তখনকার শ্রেষ্ঠ কীর্তি৷ 

বিনা কারণে কি তিনি অনন্যা? ব্যাডমিন্টনে তাঁর কৃতিত্বের স্বাক্ষর সুস্পষ্ট৷ পেয়েছেন রাজ্য ব্যাডমিন্টনে একাধিক প্রতিযোগিতায় বিজয়নীর জয়মাল্য৷ প্রথমে দৌড়ে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন পরে হার্ডলস,জ্যাভেলিন,এমন কি ডিসকাসে নিপুন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন৷ সত্যি বলতে কি নীলিমা ঘোষ খেলা কে ভালবেসেছিলেন হৃদয় দিয়ে৷ অনলস অনুশীলন,অফুরম্ত অধ্যবসায়,আর বিরামহীন সাধনা তাঁর সাফল্যের সোপান৷

হেলসেঙ্কি অলিম্পিকের আগে কোপেনহেগনের অ্যাথলেটিক্স ক্যাম্প৷ ভারতীয় দলে নীলিমা, কূর্ট-ভিক পশ্চিম-জার্মানীর ফুটবল দলে৷ ক্ষণিকের পরিচয়৷ ১৯৫৬সালের এক শুভলগ্নে কলকাতায় জার্মান কনস্যুলেটে নীলিমার সঙ্গে রেজেস্ট্রি বিয়ে হল কূর্টের৷ বিয়ের পর দু'বছর তিনি কলকাতায় ছিলেন তাঁর কীর্তির স্মৃতি বুকে নিয়ে৷ তারপর দেশ ছেড়েছেন৷ এরপর হামবুর্গে থেকেছেন,সেখানেও তিনি নিয়মিত খেলতেন ব্যাডমিন্টন৷আজ তিনি বিস্মৃতদের দলে৷আমরা কতজন ভারতের হয়ে অলিম্পিকে প্রথম দৌড়ানো মেয়েটির কথা মনে রেখেছি? সেই আমলে নিলীমা ঘোষ প্রমাণ করে দিয়েছিলেন আমরা নারী আমরা সব পারি।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন