জানেন কি এই পার্ট টাইম ক্রিকেট বোলারের জীবনী!
মানুষের জীবন কত বৈচিত্র্যময় হতে পারে, এই পার্ট-টাইম ক্রিকেটার সৌরভ নরেশ নেত্রভালকারের জীবনের দিকে তাকালে তা অনুধাবন করা যায়।
সৌরভ পুরোদস্তুর একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কাজ করছেন ওরাকলের মতো বিশ্ববিখ্যাত প্রতিষ্ঠানে। অফিস থেকে এক মাসের ছুটি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলছেন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এই পার্ট-টাইম ক্রিকেটারের কাছেই বধ হতে হলো বাংলাদেশ, এমনকি ক্রিকেটে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শক্তিশালী পাকিস্তানকেও।
পর্দার আড়ালে থাকা সৌরভের পেছনের গল্পটা শুনুন। তার জন্ম ভারতের মুম্বাই শহরে। সেখানেই বেড়ে ওঠা। ২০১০ সালে ভারত জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন আন্ডার-১৯ বিশ্বকাপ। সেবার বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী হয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু ক্রিকেটে ভবিষ্যত ক্যারিয়ার গড়ার চিন্তা তার ছিল না। ফলে, ক্রিকেট বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনোনিবেশ করেন। উচ্চমাধ্যমিকের পর ইউনিভার্সিটি অব মুম্বাইতে ভর্তির চান্স পান, সেখান থেকে সর্বোচ্চ সিজিপিএ নিয়ে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচলর ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আইভি লীগের কর্নেল ইউনিভার্সিটিতে মাস্টার্স করার জন্য স্কলারশিপ পেয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে। আইভি লীগের ইউনিভার্সিটিতে স্কলারশিপ পাওয়া কিন্তু চাট্টিখানি কথা নয়।
যাহোক, সেখান থেকে যথারীতি মাস্টার্স ডিগ্রি সম্পন্ন করার পরপরই চাকরি পেয়ে যান বিশ্ববিখ্যাত মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি ওরাকলে প্রিন্সিপাল মেম্বার অব টেকনিক্যাল স্টাফ হিসেবে। গত ৯ বছর ধরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ করছেন সেখানে। এরমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র দলের খেলেছেন অনিয়মিতভাবে। অফিস বন্ধের সময়গুলি তার কাটে ক্রিকেট খেলে। নিজের পরিশ্রমে হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দলের অধিনায়কও। ওরাকলে চাকরি এবং ক্রিকেট, দুটো সমানতালে চালিয়ে যাচ্ছেন৷ মাঝখানে আবার একটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানের নেতৃত্বও দিয়েছেন তিনি।
অবসর সময়ে সান ফ্রান্সিসকো থেকে লস অ্যান্জেলেস পর্যন্ত ৬ ঘন্টার ড্রাইভিং করেও যেতেন প্রাকটিস করতে।
ওরাকল তাকে প্রাথমিক ছুটি দিয়েছিল ১৬ জুন পর্যন্ত। এরমধ্যে গ্রুপ পর্বের খেলা শেষ হবে। প্রতিষ্ঠান ভেবেছিল, হয়ত গ্রুপ পর্বেই বিদায় নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রকে। কিন্তু যেভাবে দাপটের সাথে গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলি খেলে জিততে শুরু করেছে, তাতে সহজে অনুমেয় তারা পরবর্তী রাউন্ডেও যাবে। দেশের স্বার্থে হয়ত ওরাকল আরও ১৫দিন ছুটি বাড়াবে সৌরভ নেত্রভালকারের জন্য।
আমাদের ক্রিকেটাররা একেকজন দশ-বারো লাখ টাকা বেতন পায়। আরও কতকি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে, অথচ তাদের পারফর্মেন্স দিনদিন তলানিতে যাচ্ছে। এতো বছর ধরে ক্রিকেট খেলেও কোনো ট্রফি নাই। বৈশ্বিক কোনো আসরে বড় দলকে দাপটের সাথে হারানোর মতোও রেকর্ড নাই। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র প্রথম আসরেই কী দারুণ দাপটের সাথে টুর্নামেন্ট শুরু করেছে। এ দলটা এবার সেমিফাইনাল পর্যন্ত যেতে পারলে অবাক হওয়ারও কিছুই নাই। বরং মাঠে দলের জন্য তাদের প্লেয়ারদের ডেডিকেশন, এবং জয়ের জন্য যেভাবে তারা এফোর্ট দিচ্ছে তাতে এই দলটা ডিজার্ভ করে সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়ার। অথচ, এই দলটার কেউই এখানে পুরোদস্তুর ক্রিকেট ধ্যানজ্ঞান নিয়ে বেড়ে ওঠে নাই। কেউ রিফিউজি, কেউ পার্ট-টাইম ক্রিকেটার, কেউ ডেলিভারিম্যান, কেউ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার, কেউ নিজ দেশে সুযোগ-সুবিধা না পেয়ে এখানে ভীড় করেছে।