ভারতের প্যারাগ্লাইডিং এর সর্গরাজ্য কোনটি জানেন, ভ্রমণপিপাসুরা জানুন এক ক্লিকেই!
বর্ষা কালে ভ্রমণ একটু অন্য ভাবে মহারাষ্ট্রে ।
অনেক বাঙ্গালী বর্ষা কালে কিন্তু ঘুরতে যেতে চান তবে পাহাড় বা সমুদ্র এড়িয়ে।
কামশেত হল ভারতের একটি গ্রাম, যা মহারাষ্ট্র রাজ্যের পুনে জেলার মাওয়াল তালুকে অবস্থিত । এটি 242.96 হেক্টর (600 একর) এলাকা জুড়ে রয়েছে।
আজ তাহলে চলুন মহারাষ্ট্র একটু অন্য স্বাদ পেতে। এখানে আমরা পাহাড় জঙ্গল, নদী, ঝর্না, পুরোনো মন্দির সব পাবো একসাথে। আর আছে একটি বাড়তি পাওনা পারাগ্লাইডিংয়ের রূপে ।
ঘন সবুজ পাহাড়, মেঘের খেলা, হ্রদের সৌন্দর্য আর অ্যাডভেঞ্চারের অভিজ্ঞতা পেতে বর্ষায় চলুন কামশেত ।
যেদিকে তাকানো যায় শুধু সবুজ আর সবুজ, পাহাড়ের ঢাল বেয়ে নেমে এসেছে সাদা মেঘ, তারই মধ্যে টলটলে জলের বিশাল হ্রদ। মন্দির, গুহা, ঝর্ণার সমাহারে মহারাষ্ট্রের পাহাড়ি শহর কামশেত যেন কোনও স্বর্গরাজ্য। পশ্চিমঘাট পর্বতের গায়ে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৬৭০ মিটার উচ্চতার এই শহরে বর্ষা যেন রূপের ডালি মেলে ধরে। বছরভর এক সৌন্দর্য, কিন্তু ভরা বর্ষায় কামশেত যেন ‘রূপবতী কন্যে’। মুম্বই থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টার দূরত্বে এই শৈল শহর। লোনাভলা থেকে দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। কীভাবে ঘুরবেন জেনে নিন।
কী করবেন-
১.কামশেত প্যারাগ্লাইডিংয়ের স্বর্গরাজ্য।
এখানে প্যারাগ্লাইডিংয়ের প্রশিক্ষণ নেওয়ারও ব্যবস্থা আছে। আছে একাধিক স্কুল। এখানকার পাহাড়গুলো খুব উঁচু নয়, তাছাড়া অবতরণের জন্যেও উপযুক্ত। যথেষ্ট জায়গা থাকায় নবীনদের প্যারাগ্লাইডিং-প্রশিক্ষণের জন্য এই স্থান আদর্শ।
২ . আকাশ পরিষ্কার থাকলে, আবহাওয়া উপযুক্ত থাকলে এখানে এসে ‘হট এয়ার বেলুন’-এ চড়ার অভিজ্ঞতা সারা জীবনের সম্পদ হয়ে থাকতে পারে। শিন্ডে ওয়াডি হিলস সহ একাধিক জায়গা থেকে প্যারাগ্লাইডিং করার সুবিধা মেলে। হট এয়ার বেলুনে চড়ার জন্যও এই সময় উপযুক্ত।
বেদসা গুহা নামেই এগুলি পরিচিত। পাহাড় কেটে বিশাল এই গুহাগুলি তৈরি হয়েছিল। তার স্থাপত্য, স্তম্ভ সবই দেখার মতো। এখানে ৭ নম্বর গুহায় রয়েছে বিশাল স্তূপ। সঙ্গে প্রার্থনা কক্ষ। ১১ নম্বর গুহাটি হল বিহার বা ‘মনাস্ট্রি’। বৌদ্ধ গুহা থেকে শহরের চারপাশের অনন্যসাধারণ দৃশ্য দেখা যায়। এখানে এমন গুহাও আছে, যেখানে যেতে কষ্টকর ট্রেকিং-ও করতে হতে পারে।
৪. কামশেত থেকে ঘুরে নিতে পারেন বহু প্রাচীন সুবিশাল লোহাগড় দূর্গ। ছত্রপতি শিবাজির নামের সঙ্গে জড়িয়ে এই দুর্গ। এখান থেকে ভিসাপুরা দূর্গও ঘুরে দেখা যায়। প্রতি ছত্রে রয়েছে ইতিহাস, স্থাপত্য। ওপর থেকে চারপাশের দৃশ্যও দারুণ দেখা যায় এখান থেকে। পাওনা হ্রদও ঘুরে নেওয়া যায় লোহাগড় দুর্গ দেখার পাশাপাশি। কৃত্রিম এই হ্রদের সঙ্গে রয়েছে জলাধারও।
৫.উসকান হ্রদ কামশেতের অন্যতম পর্যটক আকর্ষণ। পাহাড়ের কোলে এই হ্রদ থেকে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য মনোগ্রাহী। ‘বোটিং’য়ের ব্যবস্থা রয়েছে এখানে । বর্ষার মরসুমে চারপাশ আরও সবুজ হয়ে ওঠে, যখন সাদা মেঘ খেলা করে তখন তার রূপ আরও সুন্দর হয়ে ওঠে। এর ধারে ক্যাম্পিংয়ের অভিজ্ঞতাও সারা জীবনের সম্পদ হয়ে থাকতে পারে।
৬. বর্ষার বাড়তি পাওনা কামশেত জলপ্রপাত। এছাড়া রয়েছে ভাজে জলপ্রপাত, মালভালি জলপ্রপাত। বর্ষাতে জল থাকে এই জলপ্রপাতগুলিতে। পাহাড়ের বুক চিড়ে নেমে প্রবল জলরাশি যখন নীচে ঝাঁপিয়ে পড়ে তখন সেই শব্দ, দৃশ্য ভুলিয়ে দিতে পারে জীবনের সমস্ত ক্লান্তি, কষ্ট।
৭. কামশেতে অসংখ্য ছোট-বড় মন্দির আছে। কোনওটা পাহা়ডের নীচে, কোনওটা পাহাড়ের মধ্যে। এখানকার কন্দেশ্বর মন্দিরও খুব জনপ্রিয়। এটি শিবের প্রতি উত্সর্গীকৃত।
এখানে কিভাবে পৌঁছবেন
আকাশ পথে
পুনে নিকটতম বিমানবন্দর। কামশেটে পৌঁছানোর জন্য ব্যক্তিগত ট্যাক্সি ভাড়া করা যেতে পারে। আপনি যদি একজন বাজেট ভ্রমণকারী হন, রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছান এবং লোনাভালার দিকে যাওয়ার উপশহরের ট্রেন ধরুন। পুনে মুম্বাই, গোয়া এবং বেঙ্গালুরুতে বিমানের মাধ্যমে সংযুক্ত। মুম্বাইয়ের ছত্রপতি শিবাজি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মুম্বাই থেকে লোনাভালা পর্যন্ত ট্যুরিস্ট ট্যাক্সি সহজলভ্য।
ট্রেনে
পুনে এবং কামশেটের মধ্যে নিয়মিত শহরতলির ট্রেন পরিষেবা চলে। যদি মুম্বাই থেকে যাচ্ছেন, আপনি লোনাভালার ট্রেনে উঠতে পারেন। সেখান থেকে কামশেত যাওয়ার উপশহর ট্রেন ধরুন। মুম্বই বা পুনে স্টেশন থেকে লোনাভালা পৌঁছানোর জন্য ট্যাক্সি ভাড়া করা যেতে পারে।
সড়কপথে
কামশেট মুম্বাই থেকে 118 কিমি এবং পুনে থেকে 56 কিমি দূরে। এটি লোনাভালা থেকে প্রায় 16 কিমি এগিয়ে। হিল স্টেশনটি নিয়মিত বাস পরিষেবা দ্বারা মুম্বাই এবং পুনের সাথে ভালভাবে সংযুক্ত। বেসরকারি এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন উভয় বাসই নিয়মিত চলাচল করে।